Header Ads

Header ADS

প্রেমকানন রাতের এফডিসি, অবাধে চলছে অনৈতিক কর্মকাণ্ড!

শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির রাতে এফডিসি পরিণত হচ্ছে প্রেমকাননে। শুধু তাই নয়, পুরো সপ্তাহে এফডিসির অভ্যন্তরে রাতের বেলায় অবাধে চলছে মাদক সেবন, কেনাবেচা আর অনৈতিক কর্মকাণ্ড।কেপিআইভুক্ত এই এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই এমন অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটছে নিরাপত্তারক্ষীদের সহযোগিতায়। বিষয়টি এফডিসির অনেকের জানা থাকলেও কোনো অভিযোগ বা পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিন এফডিসিতে গিয়ে দেখা যায়, ছুটির দিন ছাড়া এফডিসি সংশ্লিষ্ট বেশিরভাগ সংগঠনই রাত ৯টা থেকে ১০টার মধ্যে বন্ধ হতে শুরু করে। আর সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তো বিকেল ৫টার পর থেকেই নিয়ম মেনে অফিস ত্যাগ করেন। সরকারি ছুটির দিন সমিতির অফিসগুলো আরও আগে বন্ধ হয়ে যায়। শুক্র ও শনিবার হাতিরঝিলে ঘুরতে আসেন অনেক ‘কপোত-কপোতি’। যেসব যুবক ঢাকায় একটু চোখ-কান খোলা রেখে চলেন তাদের ভালোই জানা আছে, এফডিসির চার দেয়ালের মাঝে একটু ‘ইটিসপিটিস’ করলে নিরাপত্তায় কোনো ব্যাঘাত ঘটবে না! হাতিরঝিলে একটু হাত ধরাধরি আর পাশে বসে ফুচকা-চটপটিতে কি সবার মন ভরে? তার চেয়ে ঢের ভালো এফডিসির নিরাপত্তাকর্মীদের হাতে এক-দু’শ’ টাকা গুঁজে দিয়ে ঢুকে পড় এক সময়ের স্বপ্নের এই সিনেমা কারখানায়।
রাতের এফডিসি এখন রীতিমতো ভুতুড়ে বাড়ি! ছুটির দিনে তেমন কেউই এ অঞ্চল মাড়ান না। যে কারণে এফডিসির বিশাল চত্বর থাকে ফাঁকা আর অন্ধকার। বিশেষ করে ঝরনা স্পট, প্রশাসনিক ভবনের পেছনের বিল্ডিংয়ের ছাদ, কড়ইতলা, এডিটিং রুমগুলোর পেছনের চিপাচাপা-এসব স্থানে সাধারণ চলচ্চিত্রকর্মী তো দূরের কথা, নিরাপত্তারক্ষীরাও ঢুঁ মারেন না। অন্ধকার এসব জায়গায় একবার ঢুকে যেতে পারলে নিশ্চিন্তে হালের ‘ডেটিং’ শব্দটির শতভাগ সদ্ব্যবহার করা যায়। আর নিরাপত্তারক্ষীরা যেহেতু প্রবেশকালেই ‘ম্যানেজ’, সুতরাং নো চিন্তা, শুধুই…
প্রেমিক-প্রেমিকার বাইরেও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের অংশ হিসেবে মাঝেমধ্যেই রাতে এফডিসিতে দেখা যায় বিশেষ সাজ-সজ্জার তরুণীদের, সঙ্গে কোনো যুবক-যাদের সিনেমার সঙ্গে কোনো সম্পর্কই নেই। আর এসব বহিরাগতের কারণেই রাতের এফডিসি পরিণত হয়েছে মাদকের আখড়ায়। রাত ১০টার পর যেকোনো দিন এফডিসির চিহ্নিত স্পটগুলোতে গেলে পাওয়া যায় গঞ্জিকার উৎকট গন্ধ, ফিসফাস আওয়াজ।
রাত ১২টা পর্যন্ত থাকলে দেখা যায়, এফডিসির গেট থেকে অনেকেই বের হচ্ছেন হেলেদুলে, এলোথেলো অবস্থায়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাদক শুধু সেবনই নয়; বেচাকেনার জন্যও একটি সংঘবদ্ধ চক্র নিরাপদ স্থান হিসেবে বেছে নিয়েছে এফডিসিকে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলার জন্য এফডিসির প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তার সঙ্গে বারবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রশাসনের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, আমরা রাতে থাকি না। যে কারণে এফডিসির রাতের কর্মকাণ্ড নিয়ে তেমন কিছু জানি না। মাঝে মাঝে টুকরো টুকরো কিছু বিষয় কানে এলে আমরা নিরাপত্তা বিভাগকে সতর্ক করি। সবচেয়ে বড় কথা, নিরাপত্তাকর্মীরা অসৎ হলে প্রশাসনও তেমন কিছু করতে পারবে না। তিনি আরও বলেন, এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক নতুন যোগদান করেছেন। তিনি এখনও এসব বিষয়ে ওয়াকিবহাল নন। তবে তিনি যদি জানেন, তাহলে অবশ্যই নিরাপত্তা জোরদার করবেন।
এফডিসির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার জন্য এই স্থানের ভেতরে অস্ত্র, মাদক নিয়ে প্রবেশ সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। তারপরও বিভিন্ন অনুষ্ঠান বিশেষ করে সমিতিগুলোর নির্বাচন অথবা চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট কোনো অনুষ্ঠান হলেই খোদ ডাকসাইটে তরুণ প্রযোজক, পরিচালক, অভিনেতারা মাঝেমধ্যেই অস্ত্র নিয়ে প্রবেশ করছেন এবং মধ্যরাতে পানীয় জাতীয় দ্রব্য সেবন করেন বহিরাগত বিশিষ্টজনদের নিয়ে।
যেখানে তারকা অভিনেতা-অভিনেত্রী আর দেশসেরা কুশীলবদের পদচারণা, সেখানকার এমন হাল অবস্থা একেবারেই বেমানান। এখনই ব্যবস্থা না নিলে বড় ধরনের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা ঘটার সম্ভাবনাকে প্রশ্রয় দেওয়া হবে বলে মনে করেন সিনেমাওয়ালারা। সূত্র- বলা না বলা।

No comments

Powered by Blogger.