Header Ads

Header ADS

বাংলা খারাপ ছবির পরিচালকদের অবস্থান এখন কোথায়?

অশ্লীলতার খেতাব পেয়ে প্রায় ৫০০ চলচ্চিত্র বাংলাদেশে মুক্তি পেয়েছে। একটা সময় বছরে কমপক্ষে ৯০/১০০ সিনেমা মুক্তি পেলেও, সর্বোচ্চ দশটি সিনেমা এর থেকে মুক্ত থাকতো। তৎকালীন সময়ে দেশের প্রায় সব প্রডাকশন হাউজ এ ধরনের সিনেমা নির্মাণ করেছে। যার মধ্যে বিতরনের দিক থেকে উল্লেখযোগ্যভাবে বলা যায় লাভা ভিডিওর নাম। সে সময়ে যারা সিডি কিংবা ভিসিআর দেখছেন। এ কম্পানির নাম নিশ্চয়ই ভুলেননি।

আমরা পলি, ময়ূরী, শাহিন আলম, ঝুমকাদের গালি দেই। কথা হলো তারা কি জোর করে করতেন? না। রুচিহীন দর্শকরা যেমন অশ্লীলতায় বুদ হয়ে থাকতেন। একশ্রেনী পরিচালক-প্রযোজক তাই জোর করে করাতো এসব দৃশ্য। শিল্পীরা টাকা বা টিকে থাকার জন্য করতেন। কখনো তাদের ব্লাকমেইল করা হতো। কারা এসব করাতো? যেসব প্রযোজক ও পরিচালকরা এসব করাতেন। তাঁরা আজ অনেকে গা ঢাকা দেয়া। অনেকে বুক ফুলিয়ে এখনো এফডিসিতে ঘুরেন।
যতদূর জানা যায়, পরিচালক এফ কবির অঞ্জু ঘোষকে নিয়ে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের দর্শকদের খোলামেলা দৃশ্যের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। বৃষ্টিতে ভিজে গান। তাঁর হাত ধরেই অঞ্জু ঘোষের সিনেমায় আগমন ঘটে। তাঁর সঙ্গে বিবাহবন্ধনেও আবদ্ধ হন এ নায়িকা। তবে সে বিয়ে টিকেছিল মাত্র চার বছর। এফ কবির বেশ কিছু ভালো সিনেমাও নির্মাণ করেছেন। মূলত তিনি অশ্লীল যুগের নির্মাতা না। পরে আবুল খায়ের বুলবুল নব্বই দশক জুড়ে ছবিতে বিভিন্ন সময়ে অশ্লীলতার নামে গোসলের দৃশ্য দেখানো শুরু করলেন। স্বল্প বাজেটের এসব সিনেমাতে যৌনতা থাকার কারণে ব্যবসায়িক লাভও এসেছে।
মোহাম্মাদ হোসেন ‘অবুঝ দুটি মন’ ছবিতেও এই চর্চাটা চালিয়ে গেলেন। এই সিনেমায় প্রথম বাংলাদেশের কোন নায়িকাকে সুইমিং পুলে গোসলের দৃশ্য দেখানো হল। নায়িকা ছিলেন মডেল রথি। আবুল খায়ের বুলবুলের ‘অন্যায়-অত্যাচার’ ছবিতে পাহাড়ি ঝর্ণায় গোসলের দৃশ্যের ট্রেন্ড শুরু হল। মোহাম্মদ হোসেন পরে বানালেন ‘রাঙা বউ’। আমিন খান, ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত, হুমায়ূন ফরীদির সিনেমাটি ছিল অশ্লীলতা পূর্ণ।
এনায়েত করিমের ‘জননেতা’ ছবিতে প্রথমবার বাংলাদেশে সরাসরি উন্মুক্ত বক্ষ প্রদর্শন করা হল। কদম আলী মাস্তানও অশ্লীলতার দিক দিয়ে স্মার্ট। তাঁর ভয়াবহ ছবিতে বি-গ্রেডের নায়িকার আমদানি ঘটল। শরিফুদ্দিন খান দিপু বানিয়েছিলেন ‘বাঁচাও দেশ’, ‘পুলিশ অফিসার’র মতো অশ্লীল সিনেমা।
অশ্লীল যুগের সিনেমা বানাতেন মূলত এনায়েত করিম, মোহাম্মদ হোসেন (ফায়ার), শরিফুদ্দিন খান দিপু, স্বপন চৌধুরী, শাহাদাৎ হোসেন লিটন (কঠিন শাস্তি) বদিউল আলম খোকন (দানব), রাজু চৌধুরী, এম এ আউয়াল, পল্লী মালেক (ঢাকার কুতুব), এম বি মানিক (জাদরেল), শাহিন-সুমন (নষ্ট), মালেক আফসারী (মরণ কামড়, মৃত্যুর মুখে), মোস্তাফিজুর রহমান বাবু (স্পর্ধা), উত্তম আকাশ, এজে রানা, মনতাজুর রহমান আকবর, নাদিম মাহমুদ, রাকিবুল আলম রাকিব, নায়ক রুবেল সহআরো অনেকে। প্রযোজকদের মধ্যে খোরশেদ আলম খসরু, ডিপজলের বড় ভাই- বাদশা ভাই ছিলেন অশ্লীলতার অন্যতম হোতা। এদের মধ্যে অনেকেই এখন নিয়মিত সিনেমা নির্মাণ করছেন।
নব্বইয়ের দশকের ব্যাস্ত পরিচালক আবুল খায়ের বুলবুল। অসংখ্য সিনেমা নির্মাণ করেছেন। যার মধ্যে বেশ কিছু অশ্লীলতার দোষে দুষ্ট। বেশ কয়েকছর ধরে সিনেমা নির্মাণ করছেন না। ২০১৪ সালের পরিচালক সমিতিতেও তাঁর নাম ছিল।
এনায়েত করিম, প্রযোজক হিসেবে চলচ্চিত্রে আত্মপ্রকাশ ঘটলেও পরবর্তীতে পরিচালনায় এসেছেন। তার প্রযোজনা সংস্থার নাম সজনী ফিল্মস ইন্টারন্যাশনাল। তিনি বাংলাদেশ চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক সমিতির সহ-সভাপতি ও সহকারী-সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’র সাথে যুক্ত ছিলেন। ২০১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
মোহাম্মদ হোসেন সর্বশেষ ‘আই ডোন্ট কেয়ার (২০১৪)’ নির্মাণ করেছিলেন। সে সিনেমাটিতে ববি অভিনয় করেছেন। যার পোস্টার থেকে শুরু করে সিনেমাটিও অশ্লীলতায় অভিযুক্ত হয়েছে।
শাহাদাৎ হোসেন লিটন বর্তমানে দাড়ি রেখে গাড়ির ব্যাবসা করছে। লিটনের ৫২ টি সিনেমার মধ্যে ২৩ টি সিনেমার নায়ক শাকিব খান। সর্বশেষ শাহাদাৎ হোসেন লিটন পরিচালিত ‘অহংকার’ ছবি মুক্তি পায় গেল বছর। ওই ছবির নায়কও ছিলেন শাকিব। ছবিটি খুব একটা ব্যবসা সফলতার মুখ দেখেনি।
বদিউল আলম খোকনের কথা নতুন করে বলার কিছু নেই। তিনি বুক ফুলিয়ে এফডিসিতে আছেন। পরিচালক রাজু চৌধুরি এখনো সিনেমা নির্মাণ করছেন। পল্লী মালেক অনেকদিন ধরে সিনেমা নির্মাণ করছেন না। চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতিতে আছেন তিনি। শাহিন-সুমনও নিয়মিত সিনেমা বানাচ্ছেন।

No comments

Powered by Blogger.